মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় নিখোঁজের ৪দিন পর আরমানের লাশ উদ্ধার চকরিয়ায় পুকুরে গোসলে নেমে দুই বোনের মৃত্যু জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে মঙ্গলবার, থাকবে এক মাস বাংলাদেশকে ২০০ একর জমি ফিরিয়ে দিচ্ছে ভারত আওয়ামী লীগ হাতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে ‍না পারলে , জনগণ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না।: রিজভী কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল ঘিরে সংঘর্ষে নিহত ১ পেকুয়ায় লবণ ব্যবসায়ীকে মারধর করে টাকা ছিনতাই উখিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে ২ যবক নিহত মহেশখালীতে মাংসের দাম অতিরিক্ত রাখায় ৪ ব্যবসায়ীকে জরিমানা নায়িকারা ছোট কাপড় পরলে চলে, ঘরের বউদের চলে না : গোবিন্দের স্ত্রী

হজরত মুসা ও খিজির (আ.)-এর ঘটনা

মুফতি মাহবুব হাসান:
একদিন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলের এক সভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলেন, মানুষের মধ্যে অধিক জ্ঞানী কে? হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জানামতে তার চেয়ে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিল না। তাই তিনি বললেন, আমিই সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী। মহান আল্লাহ তার এ জবাব পছন্দ করলেন না। এখানে বিষয়টি আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়াই ছিল আদব অর্থাৎ এ কথা বলে দেওয়া উচিত ছিল যে, মহান আল্লাহ ভালো জানেন, কে অধিক জ্ঞানী।

এ জবাবের কারণে মহান আল্লাহ হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে ওহি নাজিল করে বলেন, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী। এ কথা শুনে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, তিনি অধিক জ্ঞানী হলে তার কাছ থেকে জ্ঞানলাভের জন্য আমার সফর করা উচিত। আরও বলেন, হে আল্লাহ! আমাকে তার ঠিকানা বলে দিন। মহান আল্লাহ বললেন, থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে নিন এবং দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলের দিকে সফর করুন। যেখানে পৌঁছার পর মাছটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে, সেখানেই আমার এই বান্দার সাক্ষাৎ পাবেন।

হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী থলের মধ্যে একটি মাছ নিয়ে সমুদ্রপথে নৌযান নিয়ে রওনা হন। সঙ্গে তার খাদেম ইউশা ইবনে নুনও ছিলেন। পথিমধ্যে নৌযানে থাকা প্রস্তর খণ্ডের ওপর মাথা রেখে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মাছটি নড়াচড়া করতে থাকে এবং থলে থেকে বের হয়ে সমুদ্রে চলে যায়।

মাছটি জীবিত হয়ে সমুদ্রে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি মুজিজা প্রকাশ পায় যে, এটি সমুদ্রের যে পথ দিয়ে চলে যায়, মহান আল্লাহ সে পথে পানির স্রোত বন্ধ করে দেন। ফলে সেখানে পানির মধ্যে একটি সুড়ঙ্গের মতো হয়ে যায়। ইউশা ইবনে নুন এই আশ্চর্যজনক ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কিন্তু তিনি এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না যে, যেখানে মাছটি জীবিত হয়ে চলে যাবে, সেখানে তাদের থামতে হবে।

মুসা আলাইহিস সালাম যখন ঘুম থেকে জাগ্রত হন, তখন ইউশা ইবনে নুন মাছের এই আশ্চর্যজনক ঘটনা তার কাছে বলতে ভুলে যান এবং সেখান থেকে আরও সামনের দিকে রওনা হয়ে যান। পূর্ণ একদিন ও একরাত সফর করার পর সকাল বেলায় হজরত মুসা আলাইহিস সালাম খাদেম ইউশা ইবনে নুনকে বলেন, নাস্তা আনো, এই সফরে যথেষ্ট ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নাস্তা চাওয়ার পর ইউশা ইবনে নুনের মাছের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তিনি ভুলে যাওয়ার ওজর পেশ করে বললেন, শয়তান আমাকে এ বিষয়টি বলতে ভুলিয়ে দিয়েছিল যে, মৃত মাছটি জীবিত হয়ে আশ্চর্যজনকভাবে সমুদ্রে চলে গেছে। তখন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, মাছ চলে যাওয়ার সেই স্থানটিই তো আমাদের গন্তব্যস্থলের নির্দেশক ছিল। অতঃপর সেই স্থানটি পাওয়ার জন্য দ্রুত পূর্বের পথ ধরে ফিরে চললেন।

তারা কাক্সিক্ষত স্থানে পৌঁছে দেখলেন এক ব্যক্তি (হজরত খিজির আলাইহিস সালাম) আপাদমস্তক চাদরে আবৃত হয়ে শুয়ে আছেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাকে সালাম প্রদান করে বললেন, আমি মুসা। সালামের জবাব দিয়ে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি বনি ইসরাইলের মুসা? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ, আমিই বনি ইসরাইলের মুসা। আমি আপনার কাছ থেকে ওই বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি, যা মহান আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বললেন, যদি আপনি আমার সঙ্গে থাকতে চান, জ্ঞান অর্জন করতে চান তাহলে কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরূপ বলে দিই।

এ কথা বলার পর উভয়ে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। ঘটনাক্রমে একটি নৌকা এলে তারা নৌকায় আরোহণের ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। মাঝিরা হজরত খিজির আলাইহিস সালামকে চিনে ফেলল এবং কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই তাদের নৌকায় তুলে নিল। নৌকায় চড়েই হজরত খিজির আলাইহিস সালাম কুড়ালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম স্থির থাকতে না পেরে বললেন, তারা কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই আমাদের নৌকায় তুলে নিয়েছেন। আপনি কি এর প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঙে দিলেন? যাতে সবাই ডুবে যায়? এতে আপনি অতি মন্দ কাজ করলেন। খিজির (আ.) বললেন, আমি পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। তখন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ওজর পেশ করে বললেন, আমি ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না।

অতঃপর তারা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ হজরত খিজির আলাইহিস সালাম একটি বালককে অন্যান্য বালকের সঙ্গে খেলতে দেখলেন। তখন তিনি নিজ হাতে বালকটির মস্তক তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মারা গেল। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এ যে বিরাট গুনাহের কাজ করলেন। হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বললেন, আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম দেখলেন, এ ব্যাপারটি পূর্বের চাইতেও গুরুতর। তাই বললেন, এরপর যদি কোনো প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দেবেন। আমার ওজর-আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

অতঃপর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। তারা খাবার খাওয়াতে অস্বীকার করল। এই গ্রামের লোকেরা ছিল কৃপণ। অথচ মুসাফিরদের খাদ্য দান করা এবং অতিথিদের আতিথেয়তা করা প্রত্যেক ধর্মের সৎচরিত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে পরিচিত। হজরত খিজির আলাইহিস সালাম এই গ্রামে একটি প্রাচীরকে পতনোন্মুখ দেখতে পেলেন। তিনি নিজ হাতে প্রাচীরটি সোজা করে দিলেন। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম বিস্মিত হয়ে বললেন, আমরা তাদের কাছে খাবার চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করল। অথচ আপনি তাদের এত বড় কাজ করে দিলেন? ইচ্ছা করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন। তখন হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বললেন, এখন শর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে। এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়। অতঃপর হজরত খিজির আলাইহিস সালাম উপরোক্ত তিনটি ঘটনার স্বরূপ মুসা (আ.)-এর কাছে বর্ণনা করেন, যেগুলো দেখে তিনি ধৈর্য ধরতে পারেননি। হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বলেন, নৌকাটির ব্যাপারে আপনি যা জানতেন না, তা হলো, সেই নৌকাটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দিই। কারণ তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগ করে নৌকাটি ছিনিয়ে নিত। ফলে এই দরিদ্র লোকেরা জীবিকা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম নৌকা হারিয়ে কষ্টে নিপতিত হতো।

বালকটির ব্যাপারে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বলেন, তার মা-বাবা ছিল ইমানদার। আমার আশঙ্কা হলো যে, এ বালক তার বিদ্রোহাত্মক আচরণ ও কুফরির মাধ্যমে তাদের কষ্ট দেবে। তাই আমি চাইলাম তাদের রব সেই বালকের বদলে তাদের যেন এমন একটি সন্তান দান করুন, যে চরিত্রের দিক দিয়েও তার চেয়ে ভালো হবে এবং যার কাছ থেকে সদয় আচরণও বেশি আশা করা যাবে।

প্রাচীরটির ব্যাপারে হজরত খিজির আলাইহিস সালাম বলেন, সেটি ছিল ওই শহরের দুজন পিতৃহীন বালকের। প্রাচীরের নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তাই আপনার পালনকর্তা ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। আর আমি নিজ মত অনুযায়ী এসব কাজ করিনি। আপনি যেসব বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হলো সে সবের ব্যাখ্যা।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION